
সিজারাজ জাহান মিমি: সিলেট, মৌলভীবাজারের মাধবপুর বিখ্যাত সেখানকার চা বাগানের জন্য। অনবদ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর নির্মল পরিবেশ যে কারো মনকে ভাল করে দিতে বাধ্য। পর্যটন এলাকা হিসেবেও এর বেশ নাম ডাক আছে বোঝা গেল। কারন বাংলাদেশী ছাড়াও সেখানে বেশ কিছূ বিদেশী পর্যটকেরও দেখা মিলল। পুরো এলাকাটিতে রয়েছে সুবিশাল পাহাড়ী ঢালের খাজে চায়ের বাগান আর মনোরম লেক।
ভ্রমনের উদ্দেশ্যে যেহেতু যাওয়া তাই সকাল সকাল দলবল নিয়ে গিয়ে হাজির হলাম মাধবপুর ‘ন্যাশনাল টি গার্ডেন’ এলাকায়। একবেলাতেই পুরো এলাকাটি ঘুরে শেষ করে ফেললাম। আর এটি যার জন্য এত সহজে সম্ভব করা গেল সে ছিল আমাদের গাইড ‘মনা’। এতটুকু পড়ে যারা ভাবছেন, এ আর এমন কি? গাইড বা প্রদর্শকের কাজ তো ঘুরানো। তাই গাইডের সাহায্যে যদি কোন জায়গা দ্রুত ঘোরা যায় তাতে আর নতুনত্ব কি? জ্বী নতুনত্ব আছে! কারন আমরা যাকে গাইড হিসেবে পেয়ে ছিলাম সেটি কিন্তু মানুষ নয়, একটি সারমেয় বা পোষ্য। খাঁটি বাংলায় যাকে বলে কুকুর।
ন্যাশনাল টি গার্ডেনের সদর ফটকটি পেরিয়েছি সবে। সামনেই নজরে পড়ল সাদা ধবধবে একটি কুকুর। কুকুর প্রীতি আমার ছোটবেলা থেকেই। কুকুর প্রীতি না বলে বরং যদি বলি অবলা প্রীতি তাহলেই মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। কারন অবলা সব প্রানীকেই (গরু, ছাগল, কুকুর) কেন যেন আমার খুব ভালো লাগে। তাই তাদেরকে হাতের নাগালে পেলে কখনোই আমি আদর করতে ছাড়ি না। সেই অভ্যাসবশতই সামনে বসা কুকুরটির মাথায় শুধু একটু হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম মাত্র। ব্যাস আর যায় কোথায়? কিছুদুর যাওয়ার পর দেখলাম সেই কুকুরটিও আমাদের পিছনে পিছনে আসছে। আমরা হাঁটছিলাম একটি ট্র্যাক ধরে। কিন্তু কিছুদুর যাওয়া পর দেখলাম ট্র্যাকটি কয়েটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েক দিকে চলে গেছে। এখন তো আমাদেরকে একটি ট্র্যাক বেছে নিতে হবে। সেই সময় আমাদের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হল সেই সাদা কুকুরটি। এবার সে আমাদের সামনে চলে এল। যেহেতু সে প্রথম থেকেই আমাদের নজরে ছিল, তাই ভাবলাম দেখিই না ওর পিছনে পিছনে যেয়ে। ছোট্ট জায়গা হারানোর ভয় নেই, পথ ভুল করলে শুধূ অতিরিক্ত হেঁটে তার মাশুল দিতে হবে।
আমরা সচেতন ভাবেই ওকে অনুসরণ করা শুরু করলাম। আশ্চর্যের বিষয় হল ওকে অনুসরণ করা পথে মনোরম দৃশ্য দেখে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে ভিন্ন পথে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলাম। ফিরে এসে ওখানে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জানতে পারলাম, আমার যে পথে বাগানটি ঘুরে এসেছি, এটিই পুরো বাগানটি ঘুরে দেখার সবচেয়ে সহজতম পথ ও উপায়। নিরাপত্তারক্ষীকে কুকুরটির কথা বলতেই একগাল হেসে বলল, ও তো মনা। মনা নামেই সবাই ওকে চেনে ওখানে। শুধু যে চেনে তাই নয়, ওকে খুব আদরও করে তারা। আর মনা যে কতটা আদুরে আমরা বুঝলাম, যখন ফিরে আসার পথে ওকে মুল গেইটের কাছে থাকা দোকানের কাছে নিয়ে আসতে চাইলাম। ভাবলাম যে আমাদের জন্য এতকিছু করল তাকে একটু আপ্যায়ন করাবো না? কিন্তু যেই মনা আমাদের সাথে পুরো বাগানটি ঘুরল সে কিন্তু অনেক সাধাসাধি করার পরও আমাদের সাথে দোকান পর্যন্ত এলো না।
অগত্যা কি আর করা, দোকানে এসে লোকমারফত মনার জন্য খাবার পাঠাতে হল। যখন ফিরে এলাম, বুকের মধ্যে মনার জন্য ভালোবাসা বাড়তেই থাকল। এমন নি:স্বার্থ যার ভালোবাসা তাকে কি ভালো না বেসে পারা যায় বলুন তো? তাই আপনারা যখন ঘুরতে ওখানে যাবেন তখন আমাদের মত আপনারাও গাইড হিসেবে মনাকে নিতে ভুলবেন না কিন্তু।
লেখিকা: সংবাদকর্মী