
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক উপ-কমিশনার ও পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে (৩৩) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় রবিবার (৫ জুন) সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পরিকল্পিত এবং টার্গেট করেই এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতু (৩২)কে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আগে থেকে তার (মাহমুদা খাতুন মিতু) গতিবিধি লক্ষ্য এবং নজরধারী করছিল সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক আলামত দেখে এ ধারণা করছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
প্রতক্ষ্যদর্শীদের বিবরণ দিয়ে সিএমপির কর্মকর্তারা জানান, বাবুল আক্তার পরিবার নিয়ে গত ৩ বছর ধরে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ওআর নিজাম রোড (মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পিছনের বিল্ডিং) ইক্যুইটি সেঞ্চুরিয়াম ভবনে বসবাস করতেন। তার অনুপস্থিতিতে ছেলে মাহির (৭) ও মেয়ে তাবাসসুমকে নিয়ে মাহমুদা খাতুন মিতু বাস করে আসছিলেন।
রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ছেলে মাহিরকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন মাহমুদা মিতু। তারা বাসা থেকে হেঁটে গাড়িতে উঠার জন্য জিইসির মোড়ে দিকে যাচ্ছিলেন। মা-ছেলে কয়েকশ গজ দূরে যেতেই ওয়েলফুড’র সামনে মোটর সাইকেলে ৩ আরোহী ধাক্কা দিয়ে মিতুকে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর মিতুর হাতে ধরে থাকা ছেলে মাহিরকে ছাড়িয়ে নিয়ে প্রথমে ছুরিকাঘাত ও পরে কানের কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে পর পর তিন রাউন্ড গুলি চালায়।
এতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন মিতু। ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি। ঘটনাস্থল থেকে বুলেটের দুটি খোসা ও দুটি তাজা বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে মাহমুদা খানম মিতু (৩৩) হত্যার খবরে তার মাগুরা শহরের কাউন্সিলপাড়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বাবুলের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বাবা আব্দুর ওদুদ এবং মা শাহিদা বেগম ও ছোট ভাই অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান লাবুসহ পরিবারের সবাই শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। তাদের সান্ত্বনা দিতে মাগুরা পুলিশ সুপার একে এম এহসান উল্লাহ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বাসায় উপস্থিত হয়েছেন।
বাবুল আকতারের আদ্যোপান্ত
প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ জঙ্গি দমনে বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে বাবুল আকতারকে আতঙ্কিত করতে জঙ্গিরাই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
গত বছরের ঘটনা, চট্টগ্রামের খোয়াজনগরে জেএমবি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। দলবলসহ সেখানে হাজির বাবুল আকতার। উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় বাবুল বেঁচে গেলেও আহত হন ৩ পুলিশ সদস্য।
এ সময় বিপুল পরিমাণ গ্রেনেডসহ বেশ ক’জন জঙ্গিকে আটক করে বাবুল আকতার।
প্রশংসিত হয় বাবুলের ভূমিকা। এমন অনেক ঘটনায় তার সাহসী পদক্ষেপ বাহিনীর অন্য সদস্যদেরও সাহসী করে তুলেছে। পুলিশের ২৪ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা বাবুল ২০০৫ এ যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। সারদা পুলিশ একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শেষে কর্মজীবন শুরু করেন র্যাব ২ এ।
২০০৮ এ চট্টগ্রামের কোতয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে কাজ শুরু করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। পরে ২০১৩ সাল চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন বাবুল।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে সেবা আর সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক, আইজিপি ব্যাচ পান, পরের বছরই পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরষ্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল পান বাবুল। চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।