
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ দাবি করেছেন ছয়টি ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার বিকেলে ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ইসি সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা এবং অনিয়ম প্রতিরোধে সমাজে সংস্কার আনতে হবে। এজন্য সামাজিক দায়িত্বও আছে। আমরা সব ধাপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। তাই ৬ষ্ঠ ধাপের আগের রাতে সিল মারার ঘটনা একদমই ঘটেনি।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইসির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে কাজী রকিব বলেন, ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির ব্যাপার নেই। আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। সুষ্ঠুভাবে তা করে আনতে চেষ্টা করেছি, সব থেকে ভালোটা করতে চেয়েছি আমরা। গুটিকয়েক মারামারি ও বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে এই ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। তার মধ্যে পঞ্চম ধাপের ভোটের দিন মারা যান অন্তত ৩৫ জন, বাকিরা ভোটের আগে-পরের সহিংসতায়। শনিবার ভোটের সময় মারা গেছে আরো তিনজন।
সিইসি আরো বলেন, আমাদের নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা আচরণ বিধিভঙ্গের দায়ে ৫০০ জনকে ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা করেছেন। আমরা পুলিশ সুপার (এসপি) ও বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছি।
স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনে এবার সহিংসতা বেড়েছে, রেকর্ড হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যায়।
এর আগে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এবং সহিংসতায় ৮০ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করে সিইসি বলেন, প্রাণহানি দুঃখজনক, এ জন্যে আমরা মর্মাহত। কমিশন এ বিষয়ে গভীর শোক প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি অনিয়ম ও সংঘাত ছাড়া সারা দেশের সব ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।
ভোট কেন্দ্র করে ১১৩ মানুষের প্রাণহানির দায় কার- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এটার জন্যে সামাজিকভাবে সংস্কার দরকার। যে কোনো মূল্যে জেতার মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
শেষ ধাপে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৬৯৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এতে ভোটার ছিল ১ কোটি ১০ লাখের বেশি। ভোটকেন্দ্র ছয় হাজার ২৮৭টি।
চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগের পাঁচ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২২৬৭ ইউপিতে ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩১০ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন।
ইসির দাবি প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. শাহনেওয়াজ ও ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।