
বরাবরের মত এবারের ৭১০ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উচ্চ পদাধিকারীদের নেতৃত্বে যে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তাতে চারিদিকে কারবালার মাতম উঠেছে। অসংখ্য মানুষের রক্তাক্ত লাশ দেখেও তাঁরা বিচলিত হননি। বরং বারবার স্বাভাবিক ঘটনা বলে সহিংসতাকে সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডারদের পক্ষে উস্কে দিয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে মনে হয়- প্রকাশ্য দিবালোকেই জনপদের পর জনপদ কুহেলী অরণ্যে পরিণত করেছে সে সমস্ত ক্যাডার’রা। মনে হয়েছে-হিংস্র পশুদেরই আধিপত্য যেন সর্বত্র। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এই সমস্ত সশস্ত্র ক্যাডার’রা নির্ভয়ে বিপক্ষ প্রার্থী ও নীরব ভোটারদের রক্ত ঝরিয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ শাসকগোষ্ঠী জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত, তাই পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে স্বদর্পে বেরিয়ে আসার জন্য তারা এই মারমুখী নীতি অবলম্বন করেছে, সন্ত্রাসের রক্তগংগা বইয়ে দিয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে সকল হত্যা হয়েছে শাসকদলের অঙ্গুলী হেলনে। আর প্রশাসন সেখানে সরকারের হত্যানীতি বাস্তবায়ন করেছে। এই নির্বাচনে দেখেছি শাসকদলের ক্যাডারদের সন্ত্রাস, পুলিশী সন্ত্রাস, র্যাবের সন্ত্রাস, সবমিলিয়ে অভুতপূর্ব নির্বাচনী সন্ত্রাস।
নির্বাচন কমিশন সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, রিগিং ও পুলিশ একাকার করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের হৃতগরিমা পুণরুদ্ধার করতে হলে বর্তমান কমিশনকে বিদায় করার কোন বিকল্প নেই। কারন এই নির্বাচন কমিশনই গণতন্ত্রে নির্বাচন নামক প্রধান শর্তটিকে হত্যা করে কফিনে ঢুকিয়ে শেষ পেরেকটি মেরে দিয়েছে। কারন বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলে কিছু নেই। সবই আওয়ামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের কর্তারাই শাসকদলের সুরে কথা বলে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বাধীন স্বত্ত্বা হিসেবে নির্বাচন কমিশননের মর্যাদার প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েছেন এই কমিশনের বর্তমান পদাধিকারীরা। তাদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ তারা নির্লজ্জের মতো এড়িয়ে গেছেন। সরকারী সন্ত্রাসে নানাভাবে পীড়িত ভোটারদের অভিযোগ, প্রতিবাদ কমিশন আমলে নেননি। ভোটারদের ওপর শাসকদলের হিংস্রতা ও বেপরোয়া আগ্রাসন যে নারকীয় রুপ পরিগ্রহ করেছে সেটিকেও চাকুরীর হারানোর শংকায় কমিশন আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকাগুলোকে এক উন্মুক্ত বধ্যভূমি ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যায়না। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের অবৈধ মুখমন্ডলে গণতন্ত্রের লেবাস পরানোর দায়িত্ব নিতে গিয়েই কমিশনের পদাধিকারীরা ইউপি নির্বাচনকে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে শাসকদলের পক্ষে অনুষ্ঠিত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন উর রশিদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।