
২৯ এপ্রিল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় স্মরণে এক বিশেষ মানব বন্ধন, র্যালি ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কয়েকটি অধিকারভিত্তিক নাগরিক সংগঠন। মানব বন্ধন ও র্যালিটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্রে (টিএসসি)। চিত্র প্রদর্শনীটির আয়োজন করে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।
উল্লেখ, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল মারিয়ান নামের র্ঘর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটে।
মানব বন্ধন থেকে বিদেশী সাহায্যের অপেক্ষা না করে নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধ তৈরি করে উপকূলীয় মানুষদের রক্ষা করার দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে। আয়োজকরা দাবি করেন উপকূলীয় মানুষদেরকে রক্ষা করাই হওয়া উচিৎ জলবায়ু অভিযোজনের মূল কথা। সরকার রপ্তানি নির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়ায় এবং উপকূলীয় মানুষ ও ভুমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে অবহেলা দেখানোতে অয়োজকরা সরকারের সমালোচনা করেন। তারা উপকূলীয় এলাকায় বাধ নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কার দাবি করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এই মানব বন্ধনটি যৌথভাবে আয়োজন করে উদ্দীপন, উদয়ন বাংলাদেশ, এমএমসি, এসডিএস, কোস্ট ট্রাস্ট, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা, ডাক দিয়ে যাই, ডোক্যাপ, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা, নলছিটি মডেল সোসাইটি, পালস, পিরোজপুর গণউন্নয়ন সমিতি, প্রান, প্রান্তজন, সংকল্প ট্রাস্ট, হিউম্যানিটি ওয়াচ।
কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন শওকত আলী টুটুল, জায়েদ ইকবাল খান, আমিনুর রসুল বাবুল এবং রেজাউল করিম চৌধুরী।
বিশিষ্ট আলোকচিত্রি শিল্পী দ্বীন এম শিবলির তোলা আলোকচিত্রের প্রদর্শনীটি আয়োজন করা হয় লিভস এন্ড ব্রাঞ্চেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংস্থা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংস্থা, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় পর্যটন সংস্থা, এনভায়রনমেন্ট মুভ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইক্যুইটিবিডি’র উদ্যোগে। “A Tale from Climate Ground Zero” শিরোনামের এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. শহীদ আখতার হোসেইন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন দ্বীন এম শিবলি এবং কোস্ট ট্রাস্টের রেজাউল করিম চৌধুরী।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকার রপ্তানি নির্ভর উন্নয়নের জন্য মরিয়া, তাই উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত রয়ে যাচ্ছে, এইসব এলাকার মানুষ গার্মেন্টস সেক্টর, শ্রমিক, রিকসা চালনা ইতাদি নানা পেশায় যোগ দিতে নিজ ভূমি ছেড়ে শহরে এসে বিভিন্ন বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। এর ফলে তারা নিম্ন মজুরির নানা পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে বাধ্য হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা ভূমি হারিয়ে দেশ যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিকে এগুচ্ছে সেদিকেও সরকারের নজর নেই, এটা আসলে উপকূলীয় এলাকার গরিব মানুষের প্রতি ধনিক শ্রেণীর এক ধরনের শোষণ।
তিনি আরও বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে উপকূলীয় এলাকায় বাধ নির্মাণের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে, কিন্তু অভাব আছে এর জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং দাতা সংস্থার পোষা পরামর্শকরা উপকূলীয় এলাকার মানুষের ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতাকে বৈদেশিক সাহায্য আদায়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। শওকত আলী টুটুল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কারের জন্য, এতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং এর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আটটি সুপারিশ পেশ করেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করার ব্যবস্থার সুপারিশ করেন। ড. শহীদ বলেন, উপকূলীয় এলাকা বাঁচাতে অবশ্যই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে বিনিয়োগ করতে হবে।